মাটির নিচে অদ্ভুত শহর
অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত নগরি অ্যাডিলেড থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র মাটির নিচের নগরি কুবার পেডি। পৃথিবীর এক অন্যতম অস্বাভাবিক স্থান এটি। এই শহরের ৮০ শতাংশ লোক বসবাস করে মাটির নিচে।
খনির শিল্পের শহর হিসেবে খ্যাত কুবার পেডিতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আবার শীতকালে তাপমাত্রা শূণ্য ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। আবহাওয়ার এমন বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও গড়ে ওঠেছে এই শহরটি।
আধুনিক নগরীর সুবিধাসংবলিত এই শহরে রয়েছে রেস্তোরাঁ, বইয়ের দোকান, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্র, ক্লাব, ব্যাংক, আর্ট গ্যালারি, মার্কেট কমপ্লেক্স। তবে এতসব আয়োজন একদিনে গড়ে উঠেনি। এর পেছনে রয়েছে অন্যরকম এক গল্প।
এই কুবার পেডির পাথুরে জমির সঙ্গে মিশে ছিল বিশেষ এক ধরনের রত্ন। এ রত্নের নাম ওপাল। এ জায়গাটার বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করে উইল হাচিসন নামের ১৪ বছরের এক কিশোর।
ঘটনাটি ছিল ১৯১১ সালের। ওপাল আবিষ্কারের পর বহু রত্নলোভী পাড়ি জমাল এখানে। রত্নের সন্ধানে শুরু হলো খোঁড়াখুঁড়ি। খোঁড়াখুঁড়ি যত বাড়তে থাকল এলাকার গভীরে নামতে শুরু করল মানুষ। মাটির নিচে বড় বড় গুহার সৃষ্টি হলো। সেখানে রোদের তাপ থেকে বাঁচতে মানুষ বসবাসও শুরু করে দিল। আস্তে আস্তে কুবার পেডির বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়তে লাগল। এখানকার আদিবাসীরা মাইনারদের খোঁড়াখুঁড়ি দেখে তাদের ভাষায় জায়গার নাম দিয়েছিল কুপা সিটি। যার অর্থ মাটিতে সাদা মানুষের গর্ত।
কালের বিবর্তনে সেটিই বদলে গিয়ে হয়ে যায় কুবার পেডি । অবাক করার মতো বিষয়, এ শহরে কোনো ঘাস বা সবুজ গাছ নেই। সবুজ বলতে এখানে আছে তৈলাক্ত বালু। তারপরও এই শহরে মানুষের আনাগোনা থেমে থাকেনি। শুরু হলো মাটির নিচে বসতি বানানো।
শুধু থাকার জায়গা নয়, তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, হয়েছে পানির সমস্যার সমাধান। কুবার পেডি এখন এতটাই জমজমাট যে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ট্যুরিস্ট ই এক ঝলক দেখে যান জাগয়াটি। অনেকেই আবার এখানে থাকার জন্য আগ্রহও প্রকাশ করে থাকেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/এস.টি